IQNA

তুরস্কের কয়লা আবিষ্কারকের স্মৃতি রক্ষায় নতুন মসজিদ

16:27 - June 12, 2021
সংবাদ: 2612947
হাজারো ঐতিহ্যের দেশ তুরস্ক। ইসলাম ও মুসলমানদের নানা ইতিহাস জড়িয়ে আছে এ ভূখণ্ডের পরতে পরতে। উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুদীর্ঘ সাত শ বছর (১২৯৯-১৯২৪ খ্রিস্টাব্দ) এবং আজ পর্যন্ত সাম্রাজ্য-পরবর্তী প্রায় শতাব্দীকাল (১৯২৪ থেকে বর্তমান) এ দেশে অসংখ্য মহামানবের আবির্ভাব ঘটেছে।

এসব মহামানবের স্মৃতি ও পূর্ববর্তী ইতিহাস সংরক্ষণে তুর্কিরা ঐতিহ্যগতভাবেই বিশেষ বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। সেই ধারা অনুসরণে এবার তারা প্রথম তুর্কি কয়লা আবিষ্কারক উজুন মুহাম্মদের নামে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় শহর জংগুলদাকে কৃষ্ণ সাগর তীরে নান্দনিক একটি মসজিদ নির্মাণ করেছে এবং দুই বছর ধরে নির্মাণকাজ শেষে স্থানীয় সময় গত ৪ জুন শুক্রবার জুমার নামাজের পর দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান তা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনও করেন।

মসজিদটি উসমানীয় স্থাপত্য সৌকর্য ও নকশায় নির্মাণ করা হয়েছে। এর প্রশস্ততা ৫৩৫ বর্গ মিটার। একই সঙ্গে মসজিদের পাশে আছে প্রশস্ত বাগান, শিশুদের পার্ক, খেলার মাঠ। চারপাশে ৭২ মিটারের সুউচ্চ চারটি মিনারও আছে। অভ্যন্তরীণ ও বাইরের সৌন্দর্য রুচিশীল যেকোনো মানুষকে সহজেই আকৃষ্ট করবে। এখানে একসঙ্গে অন্তত ছয় হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। সমুদ্র পারে নির্মিত মসজিদের চমৎকার স্থাপত্যরীতিতে এককথায় সবাই বিমুগ্ধ।

উজুন মুহাম্মদ উসমানী সাম্রাজ্যের একজন সরকারি নাবিক ছিলেন। ১৮২০ থেকে ১৮২৯ সাল পর্যন্ত সরকারি দায়িত্ব পালনকালে তিনি কয়লা আবিষ্কার করেন। একদিন তাঁর কর্মকর্তারা কয়লা নিরীক্ষার জন্য বিশেষ ধরনের ‘কালো পাথরে’র নমুনা সংগ্রহ করে তাঁর কাছে নিয়ে আসেন। এ সময় তিনি নিজ জন্মস্থান জংগুলদাক প্রদেশের কাস্তানগিতে থাকেন। এরই মধ্যে একদিন উজেন গ্রামের ফসল কাটার প্রধান কেন্দ্রে যাচ্ছিলেন। শেষ দিন হওয়ায় সেখানে সেদিন প্রচণ্ড ভিড় ছিল। তাই নদীর পারে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। এমন সময় তিনি ‘কালো পাথর’ দেখতে পান। তা দেখেই নাবিকদের কালো পাথরের কথা মনে পড়ে। অতঃপর তিনি তা জমা করে আগুনে পুড়িয়ে অঙ্গার করেন।

কালো পাথর অঙ্গারে রূপান্তরিত হওয়ার পরই তিনি তৎকালীন ‘তুর্কিস্তানে’র প্রথম কয়লা আবিষ্কারের খেতাব পান। পরে এ নিয়ে উজুন মুহাম্মদ আরো বড় পরিসরে গবেষণা ও অনুসন্ধান করেন। অতঃপর এ কয়লা ইস্তাম্বুলে উসমানীয় সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদের কাছে পাঠান। উজুন মুহাম্মদের এ সাফল্যে সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদ খুব খুশি হন এবং পুরস্কারস্বরূপ তাঁকে ৫০টি স্বর্ণ টুকরা প্রদান করেন।

এভাবেই উজুন মুহাম্মদ তুরস্কের ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেন। আজও তুর্কিদের হৃদয়ে তিনি অমর হয়ে আছেন এবং এ এরদোয়ানের উদ্যোগে নির্মিত এ মসজিদের মাধ্যমে আরো দীর্ঘদিন তিনি তাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। টিআরটি আরাবি ডটকম

captcha