IQNA

রোহিঙ্গাবিরোধি প্রচারণা করায় মিয়ানমার সেনাবাহিনীর আরও ৬০০ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করল ফেসবুক

22:00 - December 19, 2018
সংবাদ: 2607584
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ফেসবুক কর্তৃপক্ষ মিয়ানমারের প্রায় ছয়শ’ অ্যাকাউন্ট, গ্রুপ ও পেজ বন্ধ করে দিয়েছে। এই এ্যাকাউন্ট, গ্রুপ ও পেজগুলো থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিদ্বেষমূলক তথ্য ছড়ানো হতো। ফেসবুক জানায়, এসব অ্যাকাউন্ট ও পেজগুলো সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল।

বার্তা সংস্থা ইকনা: এর আগে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিয়ে বিদ্বেষমূলক পোস্ট দেওয়ায় দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধানসহ অনেকের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়।

গত মার্চে মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ফেসবুক ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। বুধবার এক বিবৃতিতে ফেসবুকের পক্ষে থেকে জানানো হয়েছে, মিয়ানমারে ৪২৫টি পেজ, ১৭টি গ্রুপ, ১৩৫টি অ্যাকাউন্ট এবং ১৫টি ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এগুলো স্বতন্ত্র খবর, বিনোদন, রূপচর্চা ও লাইফস্টাইলের আদলে পরিচালিত হচ্ছিল। কিন্তু বাস্তবে এসব পেজের সঙ্গে সেনাবাহিনীর যোগসাজশ রয়েছে অথবা ইতিপূর্বে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এমন পেজের নতুন সংস্করণ হিসেবে কাজ চলছিল।

এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো মিয়ানমার থেকে পরিচালিত বিভিন্ন পেজ ও অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিল ফেসবুক। এর আগে গত আগস্ট ও অক্টোবরেও রোহিঙ্গাবিরোধী বিদ্বেষ ছড়ানোর দায়ে অনেক অ্যাকাউন্ট ও পেজ ডিলিট করে দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে মিয়ানমার সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাং ছাড়াও আরও ২০ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নিষিদ্ধ করা হয়।

এর আগে গত আগস্ট ও অক্টোবরেও রোহিঙ্গাবিরোধী বিদ্বেষ ছড়ানোর দায়ে অনেক অ্যাকাউন্ট ও পেজ ডিলিট করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে মায়ানমার সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাং ছাড়াও আরও ২০ জন বার্মিজ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে নিষিদ্ধ করা হয়।

এ বছর মায়ানমারের যেসব মানুষকে ফেইসবুক ব্যবহারে ব্লাকলিস্টে রাখা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে উগ্র কট্টরপন্থি জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষু।

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি লিখেছে, ফেইসবুক মিয়ানমারে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী সাইট। বছরের পর বছর ধরে এতে বিদ্বেষপরায়ণ পোস্ট, বিশেষ করে দেশটির রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে পোস্ট দিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হয়েছে।কিন্তু সে বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ওই উত্তেজনা গত বছর নতুন এক চরম আকার ধারণ করে। ওই সময় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নৃশংসতা চালায় রোহিঙ্গাদের ওপর। রাষ্ট্রহীন এসব মানুষের সঙ্গে চরম অমানবিক আচরণের কারণে তারা পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য হন।

এপ্রিলে মার্কিন সিনেটের কমার্স এবং জুডিশিয়ারি কমিটির সামনে সাক্ষ্য দেওয়ার আগে এক ম্যারাথন শুনানিতে ফেইসবুকে নির্বাহী পরিচালক মার্ক জাকারবার্গের কাছে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ফেসবুকের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।

জবাবে মায়ানমারের সহিংসতাকে ‘ভয়ানক ট্র্যাজেডি’ হিসেবে উল্লেখ করেন জাকারবার্গ। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা যেন ভবিষ্যতে আর না ঘটে সেজন্য তার কোম্পানি সুনির্দিষ্টভাবে তিনটি পদক্ষেপ নিয়েছে।

ঘৃণাত্মক বক্তব্যের সঙ্গে ভাষার বিষয়টি জড়িত রয়েছে। ফলে ফেসবুক বার্মিজ ভাষায় পারদর্শী আরও কয়েক ডজন ব্যক্তিকে নিয়োগ দিচ্ছে যারা কনটেন্ট পর্যালোচনায় সক্ষম। কেননা, স্থানীয় ভাষায় পারদর্শী ব্যক্তিদের ছাড়া এসব কিছু পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন। এ ব্যাপারে আমাদের প্রচেষ্টা জোরদার করছি।

ঘৃণা ছড়ানো ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে মায়ানমারের নাগরিক সমাজের সঙ্গে কাজ করছে ফেইসবুক। এটা এজন্য করা হচ্ছে যেন, নির্দিষ্ট কিছু কন্টেটের বদলে বরং বিদ্বেষ ছড়ানো ব্যক্তিদের অ্যাকাউন্টই বন্ধ করে দেওয়া যায়।

মিয়ানমার এবং অন্যান্য যেসব দেশে এ ধরনের ইস্যু রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে এমন কিছু যেন না ঘটে সেজন্য ফেইসবুকের একটি টিম সজাগ রয়েছে।

captcha