IQNA

১৫০ বছরের পুরনো ইতিহাস নরসিংদীর আটকান্দি মসজিদ

17:24 - December 17, 2019
সংবাদ: 2609848
নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার আটকান্দি গ্রামে রয়েছে ঐতিহাসিক আটকান্দি মসজিদ। আমিরগঞ্জের মাওলানা আলিম উদ্দিন মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি স্থানীয় জমিদার ছিলেন। ৪০ বিঘা জমি ছিল তাঁর। মসজিদের পাশে ৯ ঘরবিশিষ্ট থাকার একতলা ভবন ছিল।

বার্তা সংস্থা ইকনা'র রিপোর্ট: ছোট মেঘনা নদীর কূল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের সাক্ষী মুসলমানের ইবাদতের পবিত্র ঘর—আটকান্দি মসজিদ। দেখতে আগ্রার তাজমহলের মতো। চতুর্দিকে সবুজের সমারোহ। নানা জাতের গাছপালায় ভরপুর পরিবেশ। ছায়া সুনিবিড়। ঠাণ্ডা আবহ খেলা করে সব সময়। গ্রামের এক পাশে এবং নদীর কাছে হওয়ায় সব সময় নীরবতায় আচ্ছন্ন থাকে মসজিদ এলাকা। ৩৪টি খিলানের ওপর দাঁড়িয়ে আছে মসজিদটি।

খিলানের ওপরের অংশে কারুকাজ। দুই ফুট পুরু দেয়াল। পাথর বসানো মেঝে। মেহরাবজুড়ে মোজাইক পাথর বসানো। বিভিন্ন ফুলের দৃষ্টিনন্দন কাজ। আঁকা হয়েছে গাছের পাতা। সাদা আর নীল রঙের কারুকাজ চোখ জুড়িয়ে দেয়। গম্বুজ আছে আটটি, মূল মসজিদে রয়েছে তিনটি। মাঝখানেরটি অপেক্ষাকৃত বড়। মূল মসজিদের বাইরে আছে পাঁচটি গম্বুজ। এগুলো মসজিদের গম্বুজ থেকে কিছুটা ছোট।

মসজিদের বারান্দা দিয়ে মূল মসজিদে প্রবেশের দরজা আছে পাঁচটি। বারান্দার দুই পাশে দুটি। ভেতরে প্রবেশের পথ তিনটি। বহু বছরের পুরনো এই মসজিদের প্রায় জায়গায় পলেস্তারা খসে পড়েছে। ছোট পাথর পড়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও বৃক্ষের চাড়া গজাচ্ছে। শেওলা জমে আছে মসজিদের গায়ে। এক-দুই জায়গায় এলাকাবাসী মিলে আস্তর করেছে।

ইতিহাসের খোঁজে
মসজিদের কোনো শিলালিপি না থাকায় সঠিক নির্মাণ তারিখ কেউ বলতে পারে না। স্থানীয় লোকজন বলে, প্রায় ১৫০ বছরের পুরনো মসজিদ। শতাব্দীপ্রাচীন এ মসজিদটি মোগল স্থাপত্যের আদলে গড়া। সুদূর মহীশূর থেকে কারিগর এনে নির্মাণ করেন। অনেকে মসজিদের গম্বুজকে তাজমহলের গম্বুজের সঙ্গে তুলনা করেন। স্থানীয় আব্দুল লতিফ (৭০) বলেন, ‘তিনি ছিলেন দেওবন্দ পাস আলেম।

বগুড়ার নবাবের মেয়ে বিয়ে করে এলাকায় চলে আসেন। দাদার কাছ থেকে শুনেছি, দেড় শ বছরের পুরনো এই মসজিদ।’ নরসিংদীর শিকড়সন্ধানী লেখক সরকার আবুল কালাম ‘কিংবদন্তির নরসিংদী’ গ্রন্থে লেখেন—আটকান্দি মসজিদটি নির্মাণ করেন মাওলানা আলিম উদ্দিন। তিনি দেওবন্দ পাস আলেম।

একসময় ঢাকার নবাববাড়ির (পূর্বে খাজা বাড়ি) মাদরাসা ও পরে চিঠি লেখা ও উত্তর প্রদানের দায়িত্ব পান। নবাবদের অত্যাচার, জুলুম ও ট্যাক্স প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের লক্ষ্যে কৌশলে বিয়ে করেন বগুড়ার নবাববাড়ির মেয়েকে। মাওলানা তাঁর গিন্নিকে নিয়ে চলে আসেন নিজ এলাকায়। প্রতিষ্ঠা করেন মসজিদ। অনুমান করা হয়, এটি ১৮৯০ সালের দিকে নির্মাণ করা হয়। মসজিদটি মোগল আমলের আদলে তৈরি করা হয়েছে।

যেভাবে মসজিদ হলো
স্থানীয় আব্দুল লতিফ বললেন, ঢাকার নবাববাড়িতে মাওলানা আলিম উদ্দিনের চাকরি হয়। বাচ্চাদের মক্তবে পড়াতেন। দেখতে সুন্দর ও হৃষ্টপুষ্ট ছিলেন মাওলানা। নবাবরা তাঁকে স্নেহ করতেন। একদিন বিকেলে ডাক পিয়ন আসে চিঠি নিয়ে। মাওলানার হাতে চিঠি দেন। বগুড়ার নবাব পাঠিয়েছেন ঢাকার নবাবের কাছে। পত্রে পাত্র তলব করা হয়েছে। তিনি চালাকি করে নিজেই পত্র পড়েন। বন্ধুদের সঙ্গে পরামর্শ করেন। বন্ধুরা বগুড়া যেতে জোর দিলেন। গেলেন নবাববাড়ি। বগুড়ার নবাব তাঁকে পছন্দ করলেন। বিয়ে হলো তৎকালীন নবাবের মেয়ে সাদেতুন্নেছার সঙ্গে। নবাব মহলে দিনাতিপাত করছেন মাওলানা।

বগুড়ার নবাব বিয়ের সংবাদ পাঠালেন ঢাকায়। ঢাকা থেকে জানানো হলো, তারা কোনো পাত্র পাঠাননি। এই সংবাদ নবাব মহলে চাউর হলে সাদেতুন্নেছার মা তাদের রাতে পালানোয় সহযোগিতা করলেন। দিয়ে দিলেন ব্যাগভর্তি স্বর্ণ, হীরা আর নগদ টাকা। স্টিমারে করে চলে আসেন নিজ শহর নরসিংদীর রায়পুরার আটকান্দি গ্রামে। এখানে এসে ৪০ বিঘা জমি কিনলেন। ইটভাটা নির্মাণ করলেন। সেখানে ইট তৈরি করে তারপর মসজিদ আর থাকার ঘর নির্মাণ করলেন। এখনো মাটি খুঁড়লে ইটভাটার নিদর্শন পাওয়া যায়। মেঘনা নদীর পারে বানালেন শানবাঁধানো ঘাট। অল্প সময়ে হয়ে উঠলেন স্থানীয় জমিদার। মসজিদকেন্দ্রিক সমাজ পরিচালিত হতো।
সূত্র: kalerkantho

captcha