IQNA

সর্বোচ্চ নেতা;

নরম যুদ্ধে শত্রুদের দুইটি লক্ষ্য; "শৃঙ্খলার চেইন ভাঙা" এবং "সত্যকে উল্টানো"

13:53 - March 12, 2021
সংবাদ: 2612442
তেহরান (ইকনা): ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেন: নরম যুদ্ধে শত্রুর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হল আনুগত্যের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা এবং সত্যকে উল্টানো। এই শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা অতি বিপজ্জনক এবং নরম যুদ্ধের কর্মকর্তা হিসেবে যুবকদের উচিত শত্রুরা যেন আনুগত্যের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করতে না পারে। 
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী (হাফিজাহুল্লাহ ) বলেছেন, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ইরানে ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল। নিপীড়িত মানুষের সমর্থনে এই বিপ্লব অহংকারী ও অত্যাচারী শাহ সরকার ও তার পশ্চিমা দোসরদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল।
 
তিনি আজ (বৃহস্পতিবার) পবিত্র ঈদে মাবআস বা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নবুওয়াতপ্রাপ্তি দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক গুরুত্বপূর্ণ ভাষণে এ মন্তব্য করেন।  কোনো কোনো বর্ণনা অনুযায়ী বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা (সা.) ২৭ রজব আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে নবুওয়াতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। পার্সটুডে
 
আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী (হাফিজাহুল্লাহ )তাঁর ভাষণের অন্য অংশে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কপটতার কথা উল্লেখ করে বলেন, বাস্তবতাকে ১৮০ ডিগ্রি উল্টো করে তুলে ধরার ক্ষেত্রে তাদের জুড়ি নেই। কোনো ধরনের চক্ষুলজ্জা ও ভয় ছাড়াই তারা ডাহা মিথ্যা কথা বলে বেড়ায়। আমেরিকার পূর্ণ সমর্থন নিয়ে সৌদি আরব গত ছয় বছর ধরে ইয়েমেনের নিরস্ত্র জনগণের ওপর ভয়াবহ হামলা চালিয়ে গেলেও পাশ্চাত্যে এ সম্পর্কে টু শব্দটি পর্যন্ত করেনি। যতক্ষণ ইয়েমেনিরা মার খাচ্ছিল ততদিন আমেরিকাসহ জাতিসংঘ পর্যন্ত নীরবতা অবলম্বন করেছে। কিন্তু যখনই ইয়েমেনিরা সৌদি আরবে পাল্টা হামলা শুরু করেছে তখনই পাশ্চাত্যের চিৎকার চেচামেচি শুরু হয়েছে।  বাস্তবতা সম্পর্কে এর চেয়ে নির্লজ্জ মিথ্যাচার আর হতে পারে না।
 
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরো বলেন, সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা একমাত্র সরকার যে জাপানের দু’টি শহরে পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করে দুই লাখ ২০ হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। অথচ তারাই এখন দাবি করছে, তারা গণবিধ্বংসী অস্ত্রের বিস্তার রোধ চায়। এমন সময় তারা এ দাবি করছে যখন এই আমেরিকার কাছে রয়েছে হাজার হাজার পরমাণু বোমা।  
 
তিনি বলেন, উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসকে আমেরিকা সৃষ্টি করেছে। একথা ওয়াশিংটন নিজে স্বীকার করেছে। এরপর তারা এই আইএসকে ধ্বংস করার অজুহাতে সিরিয়া ও ইরাকে জোর করে নিজেদের সেনা মোতায়েন করে এসব দেশের সম্পদ লুটপাট করছে।
 
সৌদি সরকার একজন সাংবাদিককে হত্যা করে তার লাশ কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলেছে। সে সংক্রান্ত গোপন রিপোর্ট প্রকাশ করার পর আবার সেই সৌদি যুবরাজকে নিরপরাধ ঘোষণা করেছে আমেরিকা। হাসি পায় যখন এই সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন সরকার এতকিছুর পরও মুখে মানবাধিকারের বুলি আওড়ায়।
 
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী (হাফিজাহুল্লাহ )বলেন, সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আরেকটি অভিযোগ, ইরান কেন মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে।  তারা এমন সময় এ অভিযোগ করছেন যখন সিরিয়া ও ইরাকে আমাদের উপস্থিতি ছিল এসব দেশের বৈধ সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে।  আমরা ওই দু’টি দেশ থেকে আমেরিকার সৃষ্ট সন্ত্রাসবাদ ধ্বংস করার কাজে সহযোগিতা করেছি।  অথচ আমেরিকা এ অঞ্চলে নিজের সেনা মোতায়েন রেখেছে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে। যে নিজে হাজার হাজার কিলোমিটার দূর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে সেনা মোতায়েন করতে পারে তার মুখে এই অঞ্চলেরই একটি দেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ মানায় না।
 
সর্বোচ্চ নেতা ইরানের শপথ গ্রহণকারী এই শত্রুর সকল ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সম্পূর্ণ সজাগ থাকতে দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। সবশেষে তিনি ঈদে মাবআস উপলক্ষে ইরানি জনগণসহ গোটা মুসলিম উম্মাহকে আবারো অভিনন্দন জানান। সেইসঙ্গে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে মেনে চলার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
 
মানবতার মুক্তির দূত বিশ্বনবী (সা.) ৪০ বছর বয়সে নবুওয়াত প্রাপ্ত হয়েছিলেন। আর সেই মহা ঐতিহাসিক ঘটনার সূত্র ধরে পৃথিবী থেকে শিরক, অন্যায়, জুলুম, নিপীড়ন, বৈষম্য, কুসংস্কার ও সহিংসতার অবসান এবং একত্ববাদ, আধ্যাত্মিকতা, ন্যায়বিচার ও মর্যাদার দিকে  মানবজাতির ধাবিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
 
বিশ্বনবী (সা.) তাঁর প্রতি অবতীর্ণ মুজিযা বা অলৌকিক নির্দশন দিয়ে আরব উপত্যকায় বসবাসরত অন্ধকার যুগের মানুষগুলোকে আলোর পথে ধাবিত করেন। মানুষ পাশবিক জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে প্রকৃত মানবীয় মর্যাদা অর্জন করে।
 
এই মহা পবিত্র দিবস উপলক্ষে সর্বোচ্চ নেতার ভার্চুয়াল ভাষণ আইআরআইবি’র কয়েকটি রেডিও ও টিভি চ্যানেলের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। iqna
captcha