IQNA

ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্কের জের: আরব ও ইসলামী পরিচিতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে আমিরাত

16:19 - July 02, 2021
সংবাদ: 3470236
তেহরান (ইকনা): দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ের লাপিদ সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করে সেদেশে ইসরাইলের দূতাবাস উদ্বোধন করেছেন।

এ সংক্রান্ত খবরা খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমরা আগেই জেনেছি। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমিরাত সফরকালে সেদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে নতুন চুক্তি হয়েছে। উদ্বেগের মূল কারণ হচ্ছে ইসরাইলের সঙ্গে এসব চুক্তির ফলে সংযুক্ত আরব আমিরাত একদিকে ইসলামী পরিচিতি অন্যদিকে আরব পরিচিতি থেকে নিজেদেরকে ক্রমেই দূরে ঠেলে দিচ্ছে।

গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর হোয়াইট হাউসে ইসরাইলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের বিষয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত একটি চুক্তিতে সই করে। চুক্তি অনুযায়ী গত মাসের ২৯ তারিখে ইসরাইল আবুধাবিতে তাদের দূতাবাস উদ্বোধন করে। আবুধাবিতে ইসরাইলি দূতাবাস উদ্বোধনের পর ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানান ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের পর থেকে এ পর্যন্ত তেলআবিব ও আবুধাবির মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১২ টি চুক্তি হয়েছে।

বাস্তবতা হচ্ছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকার বহুদিন ধরে আরব ও ইসলামী পরিচিতি থেকে নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে রেখেছে এবং দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে প্রকাশ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করেছে। ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাপিদের আমিরাত সফরের আগেই ইসরাইলের অনেক কর্মকর্তা দফায় দফায় আবুধাবি সফর করেছিলেন কিন্তু ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে লপিদের এটাই প্রথম আমিরাত সফর করেন।

এর আগে ইসরাইলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আমিরাত সফর করতে চেয়ে ছিলেন। কিন্তু জর্দান নেতানিয়াহুকে বহনকারী বিমানকে তাদের আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি না দেয়ায় নেতানিয়াহু সফর স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু এবার সৌদি আরব ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী বিমান তাদের আকাশসীমার ওপর দিয়ে ওড়ার অনুমতি দেয়ায় ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমিরাত সফরে গেলেন। এ থেকে বোঝা যায় আমিরাত ইসলামী ও আরব পরিচিতি থেকে কতখানি দূরে সরে গেছে। অন্যদিকে সৌদি আরবও ইসরাইলের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আমিরাত সরকার এমন সময় দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে সর্বাত্মক সম্পর্ক ও সহযোগিতা জোরদারের পদক্ষেপ নিল যখন আমিরাতের জনগণ এ ধরনের সম্পর্কের প্রচণ্ড বিরোধী‌। এক জনমত জরিপে দেখা গেছে আমিরাতের প্রায় ৮০% নাগরিক ইসরাইলের সঙ্গে খেলাধুলাসহ যেকোনো সম্পর্কের বিরোধী।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আমিরাত এমন সময় ইসরাইলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করলো যখন ইসরাইল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন সহিংস কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে পূর্ব বায়তুল মুকাদ্দাসের সালওয়ান এলাকায় ব্যাপক অভিযান চালিয়ে ইসরাইলের নিরাপত্তা বাহিনী ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি ধ্বংস করে দিচ্ছে। আরব দেশগুলোসহ জাতিসংঘ মহাসচিবও ইসরাইলি কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে এবং এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।

ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমিরাত সফরের একই সময়ে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্থনি গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক বলেছেন, সালওয়ান এলাকায় ফিলিস্তিনি ঘরবাড়ি ধ্বংসের ইসরাইলি পদক্ষেপে জাতিসংঘ উদ্বিগ্ন এবং আমরা বিষয়টির উপরে নজর রাখছি। তিনি বলেন জাতিসংঘ মহাসচিব ইসরাইলের মানবতাবিরোধী আচরণের অবসান এবং আন্তর্জাতিক আইন পরিপন্থী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য ইসরাইলি কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে দখলদার ইসরাইলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করায় আমিরাতের তীব্র সমালোচনা করেছে ফিলিস্তিনের প্রতিরোধের সংগঠনগুলো। হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে আমিরাতের এই পদক্ষেপ ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে অবস্থান। পার্সটুডে

captcha